রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ও দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী নদী। নদীর পশ্চিম পাশেই শিয়ালবুক্কা। রাজানগর ইউনিয়নের সাহাপাড়া, মগপাড়া, বড়ুয়াপাড়া, চৌকিদারপাড়া, টেকনাফপাড়া ও হরিঙ্গাছড়া গ্রাম নিয়ে যেন একটি দ্বীপের মতো এলাকা শিয়ালবুক্কা। দুই হাজার ভোটারসহ ১০ হাজার মানুষের বসবাস। নদীটি পারাপারে কোনো সেতু না থাকায় ছয় গ্রামের অবলম্বন স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত একমাত্র বাঁশের সাঁকো।
সরেজমিন দেখা যায়, জটলা বেঁধে কয়েকজন শিক্ষার্থী সাঁকোর এক পাশে দাঁড়িয়ে। অপরপ্রান্ত থেকে লাঠি ভর করে সাঁকো পার হচ্ছেন এক বৃদ্ধ। গ্রামের কয়েক কৃষক ঝুঁকি নিয়ে তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে সাঁকো পার হচ্ছেন। স্থানীয় কয়েকজন সাঁকোর খুঁটিতে আটকে থাকা গাছের গুঁড়ি ও আগাছা পরিষ্কার করছেন। কয়েকজন এক পাড়ে রাখা ডিঙ্গি নৌকা মেরামতে কাজ করছেন। দুই ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে একমাত্র ভরসা হওয়ায় সবার চেষ্টা যেন সাঁকোটির স্থায়িত্ব আরও কয়েক দিন বাড়ুক।
এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, বাকি সব নদীর অপরপ্রান্তে। এই সাঁকো দিয়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। এ ছাড়াও কয়েক হাজার মানুষ বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন চলাচল করে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও কোনো ফলপ্রসূ হচ্ছে না বলেও জানা যায়। ,
এলাকার একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা পূর্বকন্ঠকে বলেন, বাঁশের তৈরি সাঁকোটি ছোট ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পারাপারে অপরপ্রান্তের লোক না আসা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। প্রসূতি ও জরুরি রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে বেকায়দায় পড়তে হয় আরও বেশি। প্রতিবছরই বর্ষার প্রবাল স্রোতে সাঁকোটি ভেঙে ভেসে গেলে চলাচল করতে হয় রশি বেঁধে হাতে টানা নৌকার মাধ্যমে। শুষ্ক মৌসুমে নিজেদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে আবার তৈরি করতে হয়। প্রায় ১২ বছর ধরে চলছে এই ভাঙাগড়ার খেলা। ,'
মোহননাথ নামে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ পূর্বকন্ঠকে জানান, শিয়ালবুক্কা এলাকাটি দ্বীপের মতো। নদী পারাপারে সেতু না থাকায় ছয়টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হয়। শিশু-নারী ও বৃদ্ধদের ভোগান্তি আরও বেশি। গত দুই দিনের বৃষ্টিতে সাঁকোর অবস্থা নড়বড়ে হয়েছে আর একটু ভারী বৃষ্টি হলেই হয়তো সাঁকোটি নদীতে তলিয়ে যাবে। ১১-১২ বছর ধরে এভাবেই চলছে। বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি, সবাই আশ্বাস দিলেও সেতু হয় না। ,
শিউলি আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী পূর্বকন্ঠকে বলেন, প্রতিদিন আমাদের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হতে হয়। ‘বর্ষার সময় নৌকায় পারাপারে ঝুঁকি আরও বেশি। তখন বিদ্যালয়ের যেতে নির্দিষ্ট সময়ের ১ ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। ,
সাঁকো মেরামত কাজে নিয়োজিত সালাম নামে এক কৃষক বলেন, গত চার মাস আগে ১৩০ ফুটের এই সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। পানি বাড়লে দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। যেকোনো সময় সাঁকোটি পানির স্রোতে ভেসে যেতে পারে। ‘নির্বিঘ্নে পানি চলাচলে তাই সাঁকোতে আটকে থাকা গাছের গুঁড়ি ও আগাছা পরিষ্কার করছি। ,'
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম পূর্বকন্ঠকে বলেন, ইতোমধ্যে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটারের সেতু নির্মাণ প্রকল্পে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তথ্যমন্ত্রীর ডিওপত্র পিডি অফিসে পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই সেতু বাস্তবায়ন হবে। ,'
0 Please Share a Your Opinion.: