বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩

২১ বছর ধরে শিকলে বন্দি দুর্গাপুরের শাহান আলী

তোবারক হোসেন খোকন,দুর্গাপুর :  মানসিক ভারসাম্যহীন ২৭ বছর বয়সী শাহান আলী প্রায় ২১ বছর ধরে পায়ে শিকল ও হাতে দড়ির বাঁধনে বন্ধী জীবন কাটাচ্ছেন।  দিনের বেলায় বসতঘরের পেছনে খোলা আকাশের নিচে গাছের সঙ্গে ও রাতে ঘরের ভিতর খুটির সঙ্গে দু'হাতে ও পায়ে শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়।  সেখানেই চলে তার খাওয়া-দাওয়া আর প্রসাব-পায়খানা।  এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে শাহানের বন্দি জীবন।  পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানান তার পরিবার।  অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেনি তারা।


বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের থাপনারগাতি গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ মিয়ার ছেলে শাহান আলীকে তাদের  বসতঘরের পেছনে খোলা আকাশের নিচে গাছের সাথে দু'হাতে ও দু-পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে ।   তাকে সারাদিন এখানেই বেঁধে রাখা হয় বলে পূর্বকন্ঠকে জানান তার বাবা আব্দুল মজিদ মিয়া।, 


তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৩ নভেম্বর শাহান আলীর জন্ম।  জন্মের প্রায় ৬ বছর বয়স হওয়ার পর থেকেই তার মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়।  সে সময় তাকে ছেড়ে দিলে ছোটাছুটি করে যাকে সামনে পেত তাকেই মারধর করতো।  এলাকাবাসীর গরু, হাস, মুরগি, ছাগলদের মারধর করাসহ পরিবারের লোকজনদের কাছে পেলে আঘাত করার চেষ্টা করতো।  যতই বড় হচ্ছিলো অস্বাভাবিক আচরণ দিন-দিন বাড়তে থাকে।  পরে সামর্থ্য মতো কিছুদিন চিকিৎসা করানোর পরেও সুস্থ হয়নি শাহান আলী।  তার আচরণের কোনো পরিবর্তন হয়নি।  তাই অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতে বাধ্য হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বেঁধে রাখা হচ্ছে তাকে। 


শাহানের মা রহিমা খাতুন বলেন, জন্মের পরদিনই শাহানের খেঁচুনি হয়। এরপর আমরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করালে তখন কিছুটা সুস্থ হলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে আবারো অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায় তার মাঝে। তিনি কান্নায় জর্জরিত কন্ঠে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে হাতে পায়ে বেঁধে রেখেছি সন্তানকে।  দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখায় হাত ক্ষত হয়ে গেছে। এই দৃশ্য মা হয়ে সহ্য করতে পারছি না।  ,’


প্রতিবেশীদের মধ্যে কয়েকজন বলেন, 'আমরা শাহান আলীকে ছোট থেকেই দেখে আসছি এরকম শিকলে বাঁধা অবস্থায়।  প্রস্রাব পায়খানা এলে চিৎকার শুরু করে পরে পলিথিন দিলে সেখানে পায়খানা করে এরপর তার মা অথবা বাবা পরিষ্কার করেন'।  তার বাবা-মা সারাদিন ছেলের কথা ভেবে কান্নাকাটি করে।  সরকারি সহায়তা এবং বিত্তশালীদের কেউ শাহান আলীর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতো শাহান আলী। ,

 

ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন,  আমরা দ্রুতই শাহান আলীর বাড়ী যাবো এবং তার উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে  প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। ,


শেয়ার করুন

0 Please Share a Your Opinion.: