আজ থেকে দু'দিন আগে ২৫শে মার্চ/২৩ পালিত হয়ে গেলো জাতীয় "গনহত্যা দিবস"। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় জাতীয় দিবসটি পালনে সর্বক্ষেত্রে নিরবতা আর অলসতা বিরাজ করলেও সরব ছিলো উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক "জাতীয় গনহত্যা" দিবসের আলোচনা সভার অনুষ্ঠানে যোগদানে আপত্তিজনক নিরুৎসাহকে উপেক্ষা করে লোভবশতঃ সেখানে হাজির হয়েছিলাম শুধুমাত্র এতদিন পেরিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক গনহত্যা দিবসটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উত্থাপনের দাবিটি শোনার জন্য।
অবশেষে মিলল শান্তির বাণী--অনুষ্ঠানের সভাপতি,সম্মানিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাই দিবসটির আন্তর্জাতিক মার্যদার দাবী উত্থাপনের মধ্য দিয়ে। অনেকটা স্বস্তির আশ্বাস নিয়ে বেরিয়ে একটি ফেইসবুক পোষ্ট নিয়ে বিস্মিত হলাম। ফেইসবুক পোষ্টটিতে জাকির আহম্মেদ খান অত্যন্ত হতাশা আর কঠোরতার কথা উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারের রায়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির ফেইসবুক স্টেটাসকে দুঃসাহসিক বলে মন্তব্য করেন।
যদিও সেই লিখায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ এখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন সম্পর্কিত তথ্য উপস্থাপন অত্যন্ত জরুরি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ) এটি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত একটি অপরাধ ট্রাইবুনাল। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য যে,বাংলাদেশে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ নামক বৃহৎ রাজনৈতিক দলটির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ইশতেহার ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা।
সে নির্বাচনে তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করার পরই--প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ ট্রাইবুনাল, আইনজীবী প্যানেল, তদন্ত সংস্থা গঠন সহ তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
বাংলাদেশে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সৃষ্টিকারীদের বিচারে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে সরকার যখন এদসংক্রান্ত সকল তথ্যউপাত্ত সংগ্রহে নানান প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছে বিশ্ববাসীর কাছে অপরাধীদের অপরাধ প্রমানে গ্রহনযোগ্যতা অর্জনে প্রশংসিত হয়েছে। তখন জাকিরের ওয়ালে প্রকাশিত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির লিখাটিতে দেখানো হয়েছে বিচারের তদন্তকাজে পক্ষপাতিত্ব করে আওয়ামী লীগের লোককে প্রতিহিংসা বশতঃ ফাঁসানো হয়েছে ।
যেখানে সরকারই আওয়ামী লীগের, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠনের একজন নেতার উপর এহেন প্রতিহিংসার বিবরণ (সত্যতা সাপেক্ষে) বিচারের মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করারই ইঙ্গিত । বিষয়টি রায় ঘোষণার পূর্বে অথবা আসামি পলাতক অবস্থায় ট্রাইবুনালের দৃষ্টিতে আনা জরুরি ছিল। তবুও বিষয়টির সুযোগ সান্নিধ্যতাই অপরিহার্যতাকে নিশ্চিত করতে পারবে। তাই যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ও তাদের শুভানুধ্যায়ী’ রাজনৈতিক মহল ট্রাইব্যুন্যালের বৈধতা, স্বচ্ছতা ও মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালাতেই পারে।
কিন্তু ইতিমধ্যেই ট্রাইবুনালে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম যেখানে দেশের বড় বড় হুংকার প্রদানকারীদের স্পর্ধাকে গুরিয়ে দিয়ে ট্রাইবুনালকে বিচারের রায় কার্যকরে সহযোগিতা করেছে--সেখানে রায়ে মৃত্যদন্ড প্রাপ্ত পলাতক কোন একজন অপরাধী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধৃত হওয়ায় স্বজনদের পক্ষে এরকম স্টেটাস সরকারের জন্য বিব্রতকর হলেও স্বজনদের জন্য স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। কারন এমন একটি অপরাধে অপরাধীর স্বজনরা তার স্বজনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমানে সচেষ্ট থাকবেনই।
এক্ষেত্রে রাষ্ট্র যে মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে কাজটি সম্পন্ন করে যাচ্ছেন--কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির স্টেটাসে বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হলে সেটির দায় রাষ্ট্রকেই নেওয়া উচিত। স্বাধীনতার ৫২ বছরের মাথায় এরকম বিতর্ক বাংলাদেশের জাতীয় গনহত্যা দিবসকে আন্তর্জাতিক গনহত্যা দিবসের মার্যদার দাবীটিকেও ম্লান করতে পারে।
সুতারং রাষ্ট্রের সরকারকে অবশ্যই আলোচিত বিতর্কের বিষয়বস্তু আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা উচিত। কেননা যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর মেধা বাঙ্গালী জাতিকে কলংক মুক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে তাদের প্রতি উত্থাপিত যেকোন অভিযোগের বিষয়ে সরকারের ভূমিকাই অপরিহার্য। অন্যথায় ২৫শে মার্চ জাতীয় গনহত্যা দিবসটিকে আন্তর্জাতিক দিবসে রুপান্তরে আজকের প্রজন্মের দাবি উপেক্ষিত হতে পারে। ,
লেখক : মোঃ এমদাদুল হক বাবুল, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, পূর্বধলা উপজেলা শাখা।
0 Please Share a Your Opinion.: