সপ্তাহের মধ্যেই কাটা পড়বে আগাম জাতের বোরো ধান। এরই মধ্যে শীষে সোনালি আকার ধারন করেছে। আবহাওয়া প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত অনুকূলে। কৃষি দপ্তরের সঠিক পরামর্শে ও তদারকিতে রোগেরও আক্রমণ নেয়। বাম্পার ফলনের সম্ভবনা দেখছেন কৃষকরা।
যুগযুগ ধরে রাজশাহীর তানোরের বিলকুমারী বিলের জমিতে আগাম জাতের বোরো ধানের চাষাবাদ হয়ে আসছে। অনেক কৃষকের সারা বছরের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বিলের জমিতে বোরো ধান। ধানপাকা খরতাপ শুরু হয়েছে। বিলজুড়েই সোনালি সবুজ শীষের চমৎকার দৃশ্য। অল্পদিনের মধ্যেই রক্ত ঘামের পরিশ্রমের ধান উঠানে আসবে। আসায় বুক বেধেছেন বিল পাড়ের কৃষক-কৃষাণীরা। ‘
জানা গেছে, তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ব্রিজ ঘাট থেকে তানোর পৌর এলাকা হয়ে কামারগাঁ ইউপির বা উপজেলার শেষপ্রান্ত মালশিরা পর্যন্ত বিল কুমারী বিলের অংশ ধরা হয়। যুগযুগ ধরে বিলের জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে। বিলের মুল অংশ পৌর সদর গুবিরপাড়া, শীতলীপাড়া, কুঠিপাড়ার নিচ অংশকে ধরা হয়। মাত্র ১৫ বিঘা জলাশয় রয়েছে। তাছাড়া বাকি এরিয়া ধানী জমিতে রুপান্তর। মাঝ দিয়ে সরু খাল রয়েছে কয়েকভাগে। এখাল বিলের নিচুঁ জমিতে সেচের ভরসা। এদিকে বিলের নিচুঁ জমি খাস, সেই খাস জমিতে ভূমুহীন কৃষকরা অল্প খরচে চাষ করে বছরের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।,’
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির মালশিরা, গুবিরপাড়া, মাড়িয়া, জমসেদপুর মাদারিপুর, মির্জাপুর,ভবানীপুর, বাতাসপুর, পারিশো দূর্গাপুর, শ্রীখন্ডা, দমদমা, মজুমদারপাড়া, কামারগাঁ, মহাদেবপুর, হাতিশাইল ও তানোর পৌর এলাকার তালন্দ, হিন্দুপাড়া, কুঠিপাড়া, তানোরপাড়া, গোল্লাপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকার নিচে বিলকুমারী বিলের জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।,’
কথা হয় কৃষক সাহেব আলির সাথে। তিনি জানান, ইদের আগে কাটা হবে। বিলের জমিতে ফলন বাম্পার হয়। পাঁচ বিঘা জমির ধান পাক ধরেছে। ধান পাকা খরতাপ শুরু হয়েছে। এরকম আবহাওয়া থাকলে সুষ্ঠ ভাবে দান ঘরে উঠবে। ফলনও ভালো পাব ও দামও ভালো আছে। তিনি আরো জানান, সব জমিতে ধান পাক ধরেছে, ঈদের আগে থেকেই কাটা শুরু হবে। আর যদি বৈশাখী ঝড় বৃষ্টিপাত হয় তাহলে মোড়কের শেষ থাকবে না। শীতলীপাড়া গুবিরপাড়ার নিচে সব জমি কমবেশি একই সাথে কাটা পড়বে।,’
গুবিরপাড়া গ্রামের কৃষক ফারুক জানান, প্রায় এক বিঘার বেশি জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। খরচ খুব একটা হয় না। ধানের চেহারা ভালোই আছে। ইদের দুএকদিন পর কাটা পড়বে। বিঘায় ২০ মন করে ফলন হয়। তবে বৃষ্টি হলে পাওয়া যায় না। শুধু আমি না অনেক দরিদ্র কৃষকরা নিচের জমি রোপন করেন। এবার আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকুলে আছে।,’
কামারগাঁ এলাকার কৃষক বকুল জানান, শীতলীপাড়ার নিচে প্রায় এক বিঘা জমির ধানে পাক ধরেছে। ইদের আগে শ্রমিক পেলে কাটা হবে, নচেৎ ইদের পরদিন থেকেই কাটতে হবে। কারন সামান্য বৃষ্টি হলে ইউপির জমিগুলো আগে ঢুবে যায়। এজন্য সবাই আগেই রোপন করে এবং আগেই কাটা মাড়ায় শুরু হয়।,
ইউপি চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি ফরহাদ জানান, ধান গাছে প্রচুর শীষ এসেছে, চেহেরাও ভালো আছে। দু-চার দিনের মধ্যে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করবেন। বিলের জমিতে ফলন ভালো হয়,দামও ভালো। আবহাওয়া এরকম থাকলে বাম্পার ফলন ও লাভ করতে পারবে। আর যদি ঝড় বৃষ্টি হয় তাহলে মোড়কের শেষ থাকবে না। কারন সার কীটনাশকের দাম বেশি, এজন্য যেকোন বছরের তুলনায় খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে।,
তানোর পৌর মেয়র ইমরুল হক জানান, ধান পাকা রোদ বা খরতাপ চলছে। এমব আবহাওয়া চলতে থাকলে সুষ্ঠু ভাবে কৃষকরা তাদের কষ্টের সোনালি ফসল ধান ঘরে তুলতে পারবে। পৌর এলাকার কৃষকদের বছরের খাবারের ভরসা বিলের জমি। এজমি থেকে য়ে পরিমান ধান পায় সেটা বছরের খাবার হয়। বিশেষ করে কুঠিপাড়া, শীতলীপাড়া, হিন্দুপাড়া ও গুবিরপাড়া গ্রামের অনেক ভূমিহীনরা বিলের নিচুঁ জমি রোপন করে থাকেন। সেই রোপণকৃত জমি থেকে যে পরিমাণ ধান পায় সেটা বছরের খাবার ও খড় দিয়ে জালানি এবং গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আবহাওয়ার ভালো থাকবে বলে তো সবাই মনে করছেন।,
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, উপজেলার চান্দুড়িয়া ব্রীজ ঘাট থেকে কামারগাঁ ইউপির মালশিরা গ্রাম বা চৌবাড়িয়া ব্রীজ পর্য়ন্ত ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। নিয়োমিত মাঠে থেকে কাজ করা হয়েছে। একাধিক মাঠ দিবস পালন করার কারনে ধানে রোগবালা নেই। আবহাওয়া অনুকুলে আছে। কয়েকদিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে। ফলন ভালো হবে এবং দামও ভালো আছে। এবারে উপজেলায় ১৩৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে।,’
সূত্র: বার্তা২৪.কম
খবর বিভাগঃ
রাজশাহী বিভাগ
সারাদেশ
0 Please Share a Your Opinion.: