বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪

অপরিসীম দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গতকাল রাতে বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারকে যেমন দেশের রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের গুরুদায়িত্ব বহন করতে হবে, ‍‌তেমনি তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশাও বিপুল।,

এ সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, সে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের ১২৩(৩)(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্বের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।,



কিন্তু বর্তমান অবস্থাকে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে তার সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বলে মত দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে সাধারণ নির্বাচনের পর গঠিত সংসদে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হবে।



বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বুধবার রাতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ও কাদের নিয়ে সরকার গঠন করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করেন। ওই বৈঠকে এ সরকারের মেয়াদ কমপক্ষে ৩ বছর হওয়ার বিষয়ে তারা মত দেন বলে জানা গেছে। ‘তবে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে।,



এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে এ রাজনৈতিক পরিবর্তনের অনুঘটক যারা, তাদের অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা যেন উপেক্ষিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত বলে মনে করি আমরা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন ব্যক্তি; তিনি এ ব্যাপারে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। ইতোমধ্যেই তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ভুলের কারণে বিজয় যেন হাতছাড়া না হয়। ‌‌‘তার এ সতর্কবার্তা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।,



অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায়িত্ব হবে দেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতিতে সারা দেশে যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। এজন্য যা কিছু করা দরকার, তার সবই করতে হবে নতুন সরকারকে। আশার কথা, সেনাপ্রধান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন। নতুন সরকারকে এরপর যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো, অর্থনৈতিক সংকট নিরসন।,



এক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীন বৃদ্ধিতে দেশের মানুষ অত্যন্ত কষ্টে আছে। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতিও এজন্য দায়ী। সীমাহীন বৈষম্যের একটি বড় কারণ দুর্নীতি। আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি বৈষম্যের অবসান।’ তৃতীয়ত, নতুন সরকারকে নির্বাচন কমিশনসহ দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।,



এজন্য নিতে হবে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য। এসব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। আমরা এ সরকারের সাফল্য প্রত্যাশা করছি এবং আশা করছি, ‌এ ব্যাপারে সবাই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।,'




তথ্য সূত্র: যুগান্তর


শেয়ার করুন

0 Please Share a Your Opinion.: